মীরা – (ছোট গল্প)- লেখক পিঙ্কি দাস

0
216

মীরা – (ছোট গল্প)- লেখক পিঙ্কি দাস

সেদিন বাড়ি থেকে বেরুতে চাইনি আমি। বেরুতে বাধ্য হয়েছিলাম। আর কিবা করতাম বলো! আমার ইচ্ছের কোন দাম তো তোমরা কোনদিন দাওনি, তাই সেদিনও দিলেনা।

পাশের সিটের মেয়েটা এইসব আওড়াচ্ছে ঘুমের মধ্যে আর কেঁদে যাচ্ছে।
কৌতূহলবশত ওকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বললাম কি হয়েছে তোমার কাঁদছো কেন?
বলল, কিছু না।
এটা কোন স্টেশন দিদি?
বললাম, কৃষ্ণনগর।
আমায় বলতে পারো কি হয়েছে তোমার কষ্ট হয়তো কিছুটা কমবে।
না, ধন্যবাদ আমার কিছু হয়নি।
বলেই নেমে পড়ল মেয়েটি।

মনের মধ্যে কৌতূহলটা এবার যেন বেশ খানিকটা বেড়ে গেল। কেন কাঁদছিল সেই মেয়েটি? আর কী বলছিল ঐ সব? কেনই বা বলছিল?
অফিসে এসেও নিজেকে স্থির রাখতে পারছিনা। কৌতুহল যেন বেড়েই চলেছে।
পরদিন আবার দেখা হলো মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম ওর নাম মীরা বি.এ দ্বিতীয় বর্ষ -এর ছাত্রী, বাংলা বিভাগের ।

আরো জানতে পারলাম মীরা একা থাকে। মানে ঠিক অনাথ নয় অভাগি বলতে পারেন।

মীরার জীবনী সত্যি খুব কঠিন।

যখন মীরার বয়স ১৫ বছর,মাধ্যমিক দেবে ঠিক তখন বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য সমন্ধ দেখতে থাকে। ছোট্ট মেয়েটা হাজার বার বারণ করেছিল, বিয়ে সে করবে না।
কে শোনে কার কথা! একে অচপাড়া গ্রাম তার উপর আবার মেয়ে মানুষ, পড়াশোনা করে কোন ডাক্তার, উকিল হবে শুনি? এমনি মনভাব মীরার বাড়ির লোকের বিশেষত মীরার বাবার।

বিয়েটা হয়ে গেল মীরার। বিয়ের পরের রাতেই স্বামী রুপি হায়না জন্তুর কবলে পড়ে ছোট্ট মেয়েটি কাতর হয়ে পড়ে, পিপাসা গ্ৰস্থ জন্তুর লালসা মেটানোর জ্বালায়।
তবুও সহ্য করেছে সে যদি তাকে একটু স্বাধীনভাবে বাঁচতে দেওয়া হয়। হায়না রুপি স্বামী যদি একদিনের জন্যও তার কষ্ট বুঝতে চাই।
কিন্তু বৃথাই এই সহ্য বৃথাই এভাবনা।

কিন্তু না দিনের পর দিন অকথ্য অত্যাচার নির্যতন গালাগালি এই জুটেছে ওর কপালে।

কিন্তু মানুষ সইবে কতদিন?

একরাত্রে মীরা পালিয়ে আসে ওই পিশাচ বাড়ি থেকে। বাবাকে বলে সবকিছু, কিন্তু ওই যে পূর্বেই বলেছি একে গণ্ড পাড়াগ্ৰাম তার উপর আবার মেয়ে মানুষ। তাই বাবাও তাড়িয়ে দেন বাড়ি থেকে। ফিরে যেতে বলেন ঐ পিশাচ রুপি স্বামীর দ্বারে।

না মীরা সেদিন ফিরে যায়নি।

মীরা চলেযায় এক অনাথ আশ্রমে। হ্যাঁ আত্মীয়রা যখন অমানবিক হয় তখন এছারা কোনো উপায় থাকেনা।
মীরা মাধ্যমিক দিয়েছে ওই অনাথ আশ্রম থেকে।
আশ্রমের ছেলে মেয়েদের ভালোবাসা ও পরিচালক মণ্ডলীর ভালোবাসা মীরার বাঁচবার একমাত্র সম্বল।
নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হবে তাই চালিয়ে যেতে হবে পড়াশোনা এটাই মীরার জীবন বাণী ।

উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে কলেজে পড়ছে মীরা। এখন সে আশ্রমের বাচ্চাদের পড়ায়।

মীরার স্বপ্ন সে একদিন দেশের তথা সমাজের চোখের পর্দা খুলে ফেলবে। ছেলে মেয়ের পার্থক্য মুছে ফেলবে। কবি নজরুলের ভাষার……..

“বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অধেক তার করিয়াছে নারী, অধেক তার নর ”

সে স্বপ্ন দেখে দেশের তথা সমাজ থেকে মুছে গেছে বাল্যবিবাহের করাল বিষ। সে স্বপ্ন দেখে আর কোনো মীরা পিশাচ বা হায়নার কবলে পরবে না।

Google search engine

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here