মীরাবাইয়ের জীবন কাহিনী নিয়ে স্টার জলসায় শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক শ্রীকৃষ্ণভক্ত মীরা

0
154

সৃজনী গঙ্গোপাধ্যায় : স্টার জলসায় সম্প্রতি শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক শ্রীকৃষ্ণভক্ত মীরা। শুরু হওয়ার আগে থেকেই এই ধারাবাহিক নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ তুঙ্গে, তার কারণ এটি একটি ভিন্ন স্বাদের ধারাবাহিক। যেখানে ভক্তি ও প্রেমের মিশেলে ভারতের এক বিখ্যাত চরিত্র মীরাবাইয়ের জীবন কাহিনী তুলে ধরা হবে। অন্যদিকে দেবাদৃতা বসু ,প্রারব্ধি সিংহ রায় ,জয়ী দেব রায় , ভাস্বর চ্যাটার্জি, সুদীপ সরকার ,সুজাতা দা সহ অনেক জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীরাই এক জায়গায় হয়েছেন এই ধারাবাহিকের সূত্রে। এবার এই ধারাবাহিকের শুটিং-এর কিছু অংশ এল দর্শকের সামনে।

দেবাদৃতা জানালেন “এই ধরণের চরিত্র আমি প্রথমবার করছি, তাই খুবই এক্সাইটেড লাগছে। প্রতিদিন অনেকটা সময় লাগে আমার মেক-আপে…। মীরাবাই-এর মধ্যে একটা জেদ আছে, সে কৃষ্ণকেই তার স্বামী ভাবে। তার হয়তো বিয়ে হয়ে গেছে, সংসার আছে। কিন্তু সবকিছু ভুলে সে কৃষ্ণকেই চায়…।
আজকের দিনে কেউ যদি এরকম একটা অ্যাবস্ট্রাক্ট ফর্মকে ভালবাসে লোকে তাকে পাগল বলবে। কিন্তু তখন মীরাবাই সেটাই করে দেখিয়েছিলেন”।

অন্যদিকে ধারাবাহিকের প্রধান উপদেষ্টা শিবাশিষ বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন মীরাবাইয়ের ইতিহাস- “তখনকার দিনের এক রাজকুমারী, যার নিজের অমতে বিয়ে হয়েছিল। চিতোরের মত বন্ধ জায়গায় সে কাটিয়েছে তার বিবাহিত জীবন। স্বামী তাকে যতই ভালবাসুক, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা এমন কোনো অত্যাচার নেই যা মীরার উপর করেনি। তাকে বারবার খুন করতে চাওয়া হয়েছে, জলে ভাসিয়ে দিতে চাওয়া হয়েছে…। মীরা বেঁচে গেছেন দৈবগুণে, কৃষ্ণের কৃপায়…। মীরা চিতোরের রাজতন্ত্রের সমস্ত বন্ধন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমার ভক্তির কাছে কারো শাসন আমি মানি না। তাই এক বিদ্রোহিণীর নাম মীরা”।

অন্যদিকে গবেষক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি জানালেন ” মীরার লাইফ এখানেই সাকসেসফুল যেভাবে সে প্রেমের অন্বেষণটা করে গেছে…। সমস্ত কিছু পেরিয়ে তাঁর কৃষ্ণ আছেন তাঁর কাছে, আর অন্য কিছু নেই। এটা একটা সমর্পণ, আত্মনিবেদনের জায়গা…। কৃষ্ণ তাঁর প্রেরণা, কৃষ্ণ তাঁকে বাঁচার শক্তি দেন”।

দেখা গেল রাজা ভোজরাজের মেক আপের দৃশ্যও। রাজা ভোজরাজের চরিত্রে অভিনয় করছেন জয়ী দেব রায়। তিনি জানালেন “কোনো রাজাকে আমরা কখনো চোখের সামনে দেখিনি, তাই আমাদের একটা রেফারেন্স নিয়েই এগোতে হয়”। বস্তুত সেই জন্যই এই ধারাবাহিকের প্রত্যেকটি চরিত্রই চ্যালেঞ্জিং কারণ এই গল্প এতদিন আগেকার যে ইতিহাস ছাড়া তাকে আর জানার বা দেখার কোনো উপায় নেই। আর বাঙালি এই ধারাবাহিকের মধ্যে দিয়ে দেখতে পাবে সেই পুরোনো রাজস্থানকে। এই ধারাবাহিকের যে সেট তৈরি হয়েছে তা একেবারেই রাজকীয়, একইসঙ্গে অসামান্য আলোর কাজের ফলে যেন রাজবাড়ির অন্দরমহলের চিত্রটাই ফুটে উঠেছে সামগ্রিকভাবে। এমনকি আসল তরবারিও ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে।

নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি আরো জানালেন ” একটা বড় কিছু করতে গেলে ছোট ছোট ডিটেইলসের দিকে নজর না দিলে চলে না”। তখনকার রাজস্থানে মেয়েদের চন্দ্র সূর্যের মুখ দেখার অধিকারও ছিল না। সেই সমাজে বড় হয়েও মীরা কবি, গীতিকার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলেন সম্পূর্ণ নিজের জোরে। শিবাশিষ বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, “মীরার গানগুলো যেন এক ডায়রির মত। তাঁর গানগুলির মধ্যে দিয়ে জীবনের সমস্ত গোপন রহস্য বলে গেছেন মীরা। আর সেগুলো তিনি জানাচ্ছেন তাঁর সারা জীবনের প্রেমিক শ্রীকৃষ্ণকে”।

 দেবাদৃতা আরো জানালেন ” আমিও মীরার মতই খানিক কৃষ্ণ পাগল”। অতদিন আগের এই রাজকুমারী খালি পায়ে হেঁটে গেছিলেন বৃন্দাবন তাঁর প্রেমের খোঁজে। তাঁর স্বামী ভোজরাজের সাথে সাধারণ স্বামী স্ত্রীর মত সম্পর্ক হয়তো তাঁর ছিল না। প্রায় পাঁচশো বছরেরও বেশি ধরে গোটা উত্তর ভারতে নিজের গান দিয়ে বেঁচে আছেন মীরা। তাই মীরার কাহিনী একইসাথে এক চিরকালীন প্রেম এবং বিদ্রোহের কাহিনী। এক নারীর নিজের জোরে, আত্মবিশ্বাসে ভক্তিতে সম্পূর্ণ হয়ে ওঠার কাহিনী। সোমবার, ২৬ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে শ্রীকৃষ্ণভক্ত মীরা, স্টার জলসায় প্রতিদিন রাত নটায়।

Google search engine

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here