সৃজনী গঙ্গোপাধ্যায় : আজ প্রথম বাঙালি ও ভারতীয় মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। তার জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানালো গুগল ডুডল। শুধু ভারতে নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ারই প্রথম মহিলা চিকিৎসক তিনি। আজ, ১৮ জুলাই কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়েরর ১৬০ তম জন্মদিন। চিকিৎসাশাস্ত্রে এবং মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে আসার পিছনে অন্যতম অনুপ্রেরণা তিনি।
১৮৬১ সালে ভাগলপুরে জন্মগ্রহণ করেন কাদম্বিনী বসু। পশ্চিমী চিকিৎসাশাস্ত্রে ক্রমশ পারদর্শী হয়ে ওঠা এই মহীয়সী নারী, প্রথম মহিলা যিনি ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজে ১৮৮৪ সালে ২৩ বছর বয়সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। প্রচুর লড়তে হয়েছিল তাঁকে সেখানে ভর্তি হওয়ার জন্য কারণ তখনকার সমাজে মেয়েরা শল্যচিকিৎসা শিখবে সে কথা ভাবাই যেত না। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে তিনি স্কটল্যান্ড চলে যান এবং ফিরে এসে ভারতে এবং কলকাতায় নিজের স্বাধীন চিকিৎসা ব্যবসা শুরু করেন।
কাদম্বিনী দেবীর পিতা ভাগলপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি এবং অভয়চরণ মল্লিক মিলে ভাগলপুরে নারী শিক্ষার প্রসারে আন্দোলন শুরু করেন।
সে সময়ে বাঙালি মধ্যে মহিলাদের পড়াশোনার চল তেমন ছিল না। আর চিকিৎসাবিদ্যা পড়া তো ছিল অনেক দূরের ব্যাপার। কাদম্বিনী সে সময়ে তাঁর বাবার উদ্যোগে বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরে তিনি বেথুন স্কুলে যোগদান করে বেথুন কলেজ থেকে প্রথম মহিলা স্নাতক হিসেবে ব্রিটিশ ভারতে উত্তীর্ণ হন। নিজের স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করার পাশাপাশি তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রে নিজের উৎসাহ দেখিয়েছিলেন এবং ঠিক করেন যে পরবর্তীতে চিকিৎসক হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবেন। তারই মাঝে ১৮৭৫ সালে মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজ মহিলাদের ভর্তি নেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ শুরু করে। সে সময় ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজে মহিলাদের পড়ার অনুমতি ছিল না। তার স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় এবং তিনি উদ্যোগ নিয়ে সেই পরিস্থিতি পরিবর্তনের উদ্যোগ নেন এবং প্রথম ছাত্রী হিসেবে ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে যোগ দেন। কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় এর স্বাধীন চিকিৎসক হিসেবে প্রচেষ্টা গোটা দেশে এশিয়ার মধ্যে মহিলাদের পড়াশোনা, চাকরির ক্ষেত্রে এবং নিজের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটা নতুন দিক খুলে দিল। অনেক নারীরা তাঁকে দেখে পড়াশোনার সাহস পান।
কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন ১৮৮৩ সালে। বিয়ের মাত্র ১১ দিন পরই তিনি ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন চিকিৎসক হিসাবে। তাঁদের আট ছেলে মেয়ে ছিল যার দুজন দত্তক নেওয়া। ১৯৩০ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে মারা যান। মারা যাওয়ার আগেও তিনি একটি অস্ত্রোপচারে অংশ নেন এবং সফলভাবে অস্ত্রোপচার করেন।
হাজার বাধা পার করেও কাদম্বিনী তাঁর লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। সেই সময়ের নিরিখে প্রচুর অর্থোপার্জনও করতেন তিনি নিজের যোগ্যতায়। নেপালের রাজবাড়িতে তিনি একা গিয়েছিলেন চিকিৎসা করতে। বহু দূর দূর থেকে ডাক আসত তাঁর, এতটাই ছিল তাঁর খ্যাতি। যেহেতু তখনকার সময়ে পুরুষ ডাক্তাররা নারীদের ছুঁতে পারতেন না তাই বহু ক্ষেত্রে অসুস্থ মহিলারা বিনা চিকিৎসায় মারা যেত। কিন্তু কাদম্বিনী গাঙ্গুলি সেই ধারণা সকলের পালটে দেন। আজ এই মহীয়সী নারীর জন্মদিনে আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।